প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে ভোট কী? হযরত মাওলানা মুফতী শফী রাহি. ভোট সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা লিখেছেন যে, যে ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি জিনিসের সমষ্টির নাম। যথা:
১. সাক্ষ্য প্রদান, ২. সুপারিশ, ৩. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান।
কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল সকলের জানা রয়েছে যে, শরীয়তে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধিত্বের সনদ দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব দানকারী তার ভবিষ্যৎ সকল কার্যকলাপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছে। এমনিভাবে সুপারিশের বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য।
তাইতো আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- যে ভালোর সুপারিশ করবে, সে তার নেকির ভাগী হবে, আর যে মন্দের সুপারিশ করবে, সেও মন্দের হিস্যা পাবে। (সূরা নিসা : ৮৫)
ভোটের মধ্যে যে তিনটি বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে সাক্ষ্যের বিষয়টি অন্যতম। অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ভালো এবং যোগ্য। এখন যদি যথাযথ জায়গায় সীল দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করা হয়, তবে সে হবে সত্যবাদী। অন্যথায় সে মিথ্যাবাদী হবে। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে খবর দিব না? অতঃপর তিনি বললেন, মিথ্যা বলা বা মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া। (সহীহ বোখারী : ৫৯৭৭)
অথচ বর্তমান জামানায় মিথ্যা আমাদের কাছে কোনো বিষয় মনে হয় না। কথাবার্তায়, ক্ষমতায়, আদালতে, বক্তৃতা, ভাষণে, সব জায়গাতেই মিথ্যার সয়লাব।
মিথ্যা সাক্ষ্যের ক্ষতি ও খেসারত বলে শেষ করা যাবে না। মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ভোট প্রয়োগ করার কারণেই আজকে আমরা দেখতে পাই, অযোগ্য ও অপদার্থের উত্থান, দুর্নীতিবাজ ও শোষক শ্রেণির ক্ষমতায়ন। এ কারণেই ইনসাফযোগ্য এবং সৎ আমানতদার ব্যক্তিগণ নীরবতা পালন করে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে বাধ্য হোন।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা আমাদের সামনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তো বর্তমান সমাজে অধিকাংশ আসনে লোকদের ভোট দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, এমন লোক তো পাওয়া যাবে না, যার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করা যায়। এ কারণে অনেকেই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে আর তা হচ্ছে মন্দের তুলনামূলক কম ক্ষতিকে বেছে নেওয়া এবং অধিক ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা।
কোনো আসনে একজন লোককেও যদি ভোট দেওয়ার উপযুক্ত মনে না হয়, তবে তাদের তাদের মধ্য হতে যে নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্মে অন্য প্রার্থীর তুলনায় ভালো তাকেই ভোট দিতে হবে। কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহীতা, ইসলামের বিরুদ্ধে দুশমনি, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থবিরোধী হওয়ার স্পষ্ট আলামত থাকে, তাহলে ওই অসৎ ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া যাবে না।
আজ থেকে প্রত্যয় গ্রহণ করি, যারা নির্বাচনের আগে আমাদেরকে সোনা বন্ধুর গান শুনিয়ে মাতাল করে রাখে, যারা মাথায় পট্টি আর হাতে তাসবিহ নিয়ে তিনি ভিক্ষুকের মতো জনগণের ঘরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে থাকে আর ক্ষমতার মসনদ দখল করার পর তাদের পেটোয়া বাহিনীকে আমাদের ওপর কুকুরের মতো লেলিয়ে দেয়, তাদেরকে আমরা ভোট দেবো না। জাতি ওদেরকে ক্ষমতার পবিত্র মসনদে দেখতে চায় না।
তাই আসুন, সঠিক জায়গায় ভোট প্রয়োগ করে (অবশ্যই যদি ভোট প্রদানের পরিবেশ থাকে) নিজেদের আমানতদারীর পরিচয় দেই এবং দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, সৎ, নিষ্ঠাবান ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে ভোট দেই। যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করবে জাতির কল্যাণে। যাদের চিন্তা-চেতনা থাকবে দেশকে সমৃদ্ধির করার। তাহলেই সার্থক হবে আজকের আমার এ লেখাটি।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ইত্তেহাদ টাইমস