তপ্ত রোদ্দুর গায়ে মেখে গহনার দোকানে এসে দাঁড়িয়েছে মুনা। বাবার দেয়া আট’আনার দুল জোড়া দোকানীর দিকে বাড়িয়ে দেয় বন্ধকের উদ্দেশ্যে। এরপর দোকানীর দেয়া বন্ধকের পনেরো হাজার টাকা পার্সে পুরে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে দোকান থেকে।
এমুহূর্তে অনিকের প্রতি রাগ আর ক্ষোভের তীব্রতা যেন রোদ্দুর অপেক্ষা তীব্র মনে হচ্ছে মুনার। গত ক’দিন ধরে এত বলেও লাভ হলো কই! আজ সকালে ইদের শপিংয়ের জন্য হাজার পাঁচেক টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে অনিক। এসবের মানে বুঝে আসে না তার!
“এই সামান্য টাকা দিয়ে কি আর এমন শপিং করা যাবে! এদিকে বিয়ের পর এ’টাই তার প্রথম ইদ। প্রেস্টিজেরও ব্যাপার স্যাপার! কাজিন আর ফ্রেন্ড সার্কেলের কাছে মুখ দেখাবার উপায় রবে?” মনে মনে ভাবে মুনা।
প্রতি ইদে বন্ধুমহলের মধ্যে সবচেয়ে দামী আর সুন্দর ড্রেস হিসেবে স্থান পায় মুনার ড্রেসটি। সবাই অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে কেবল মুনাকে। এবার তার হেরফের হলে চলবে কেমন করে? তাইতো বাবার গিফট করা দুল জোড়া বন্ধক দিতে বাধ্য হয়েছে।
গহনার দোকান থেকে বের হয়ে সুপার শপের দিকে পা বাড়ায় মুনা। আর মনে মনে কল্পলোকে আঁকতে থাকে তার ইদের ড্রেসের আল্পনা। যে করেই হোক এবারও সবচেয়ে সুন্দর আর দামী ড্রেসটা তার’ই হতে হবে…!’
প্রিয় পাঠক, উপরের গল্প আমাদের বাস্তবজীবনেরই খণ্ডচিত্র। এটা সর্বজনবিদিত যে, ইদের দিন সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নাহ। মূলত এই সুন্নাহকে কেন্দ্র করেই নতুন পোশাক কেনার রেওয়াজ চালু হয়েছে। আসুন ভেবে দেখি, মুনার ন্যায় সুন্নাহটাকে বিকৃত করে বিলাসিতা, অপচয় আর লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমরাও নতুন পোশাক ক্রয় করছি নাতো?
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন-
” খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচকারীদের পছন্দ করেন না।” (আরাফ- ৩১)।
ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন -“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে খ্যাতির পোশাক পরিধান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে লাঞ্চনা ও অবমাননার পোশাক পরিয়ে দিবেন।” (ইবনে মাজাহ)।
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা:) বলেন -“হালাল বস্তু থেকে যা ইচ্ছা খাও এবং জায়েজ পোশাক থেকে যা ইচ্ছা পরিধান করো, কিন্তু দু’টি জিনিস যেন তোমাকে ভুলের মধ্যে না ফেলে দেয়। (১)অতিরিক্ত খরচ করা, (২) রিয়া ও অহংকার করা। (বুখারী)।