রিফাত লেখাপড়া শেষ করে হন্য হয়ে চাকরির সন্ধান করছে! একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কোন জায়গায় চাকরি হচ্ছে না। চাকরি যে সোনার হরিণ, তার নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য। আর টাকা ও মামা না থাকলে চাকরির আশা করা এভারেস্ট বিজয়ের মতো ব্যাপার।যাদের টাকা ও মামা আছে চাকরির ক্ষেত্রগুলো আপাতত ওদের দখলে। এজন্য অনেক মেধাবী ছাত্ররা চাকরি পায় না। রিফাতের লেখাপড়া শেষ। এখন তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না।ওর মা-বাবা ওকে অনেক কষ্ট করে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করে লেখাপড়া করিয়েছে। উনাদের জন্য তো কিছু একটা করতে হবে এই দুশ্চিন্তা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অনুশোচনার অনলে রিফাত দগ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত । ছোটবেলা থেকেই ওর স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। স্বপ্নকে সত্যে রূপান্তরিত করতে ও গ্রামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলো।এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে ওকে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিতে হয়। তার প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবেই চলছিলো। শিক্ষার্থীদের থেকে ততটুকুই বেতন নিত যতটুকু না নিলে না হয়।ওর স্বপ্নতো ছিল গ্রামের শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে তাঁর পরিবারেরও একটা সম্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছিলো।কালের আর্বতনে সময়ের পালাবদলে চলছিল দিবস রজনীর পরিক্রমা। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হঠাৎ একটা খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে! সরকার করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, কলকারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে ঘোষণা দিয়েছেন এ খবর শুনে রিফাতের মাথায় যেন সাত আসমান ভেঙে পড়লো। ও এখন কী করবে? কোথায় যাবে?
প্রায় দেড় বছর যাবৎ তার মত আরও কত রিফাত এভাবে পথহারা। চাতক পাখির ন্যায় তারা অপেক্ষমান, কবে খোলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান…