যায়েফ আতিক
‘পশ্চিমা দর্শন ও জাদিদ ইলমে কালাম’ নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনা শুনতে কোন আলেম না চাইবেন? কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এমন বিষয়ে জানার পিপাসা যতোই থাকুক, দারসের প্রচলন যেমন নেই বললে চলে, তেমনি এ জাতীয় কোনো কেন্দ্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। ফলে বিরাট এক ঘাটতির জায়গা থেকেই যায়, যা অপূরণীয়। কিন্তু আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলতে পারি। এমন দারসে হাজির হতে পারছি। শরিক হচ্ছি বিশিষ্ট দার্শনিক আলেমে দ্বীন, মা’ হাদের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, উস্তাদে মুহতারাম মুসা আল হাফিজ দাঃবাঃ এর দারসে।
কারণ আমি ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছি মা’ হাদুল ফিকরি ওয়াদ্দিরাসাতিল ইসলামিয়া এ।
গত বুধবারে দারসের আলোচ্য বিষয় ছিলো এটি (পশ্চিমা দর্শন ও জাদিদ ইলমে কালাম)। এর আগের দিন তিনি দারস প্রদান করেন রাসূলে কারীম সা. উসওয়াতুন হাসানাহ হওয়ার ঐতিহাসিক ভিত্তি নিয়ে। বিশ্বের অন্যসব ধর্ম ও ধর্মপ্রবর্তকের জীবনকে তিনি বিশ্লেষণ করেন। এমন বিশ্লেষণ আমরা প্রথমই শুনলাম। তিনি সকল ধর্ম ও ধর্মগুরুদের জীবনকে ইতিহাসের মানদণ্ডে যাচাই করে প্রমাণ করলেন মুহাম্মদ সা. ই একমাত্র উসওয়াতুন হাসানাহ।
মা’হাদে এ রকম নতুন নতুন জরুরী বিষয়গুলোর সাথে আমরা পরিচিত হচ্ছি প্রতিদিন। উসুলুদ্দা’ওয়াহ এর ক্লাস নিচ্ছেন মুহতারাম আলাউদ্দিন রফিক দাঃবাঃ। ইংরেজির ক্লাস নিচ্ছেন মুহতারাম আরিফ জামান দাঃবাঃ।
খ্রিস্টবাদ ও হিন্দুধর্মের ক্লাস নিচ্ছেন মুহতারাম আরিফুল ইসলাম দাঃবাঃ।
আগামী সপ্তাহের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান আমরা। আগামী সপ্তাহে নিয়মিত দারসসমূহের পাশাপাশি অতিথি শিক্ষকদের মুহাযারাও প্রদান করা হবে। উস্তায প্রফেসর ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসাইন (হাফিজাহুল্লাহ) এর মুহাযারা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয় কী? বিষয় হচ্ছে বিশ্বায়ন,গতি- প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য-প্রক্রিয়া, মুসলিম জাহানে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব এবং ইতিবাচক প্রভাবকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষায় করণীয়।
মুহাযারা পেশ করবেন শায়খ তাহমিদে মাওলা (হাফিজাহুল্লাহ) বিষয় হচ্ছে, হযরত নূহ আ.এর দাওয়াত বনাম সমকালীন সমাজ,সংস্কতি ও চিন্তাধারা। নুহ অা. এর দাওয়াতের ধরণ ও প্রকৃতি। তাঁর দা’ওয়াতের জবাবে সমকালীন প্রতিক্রিয়া ও তাঁর ভূমিকা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাওয়াতে দ্বীনের ক্ষেত্রে নূহ আ. এর অাদর্শ ও বর্তমান বাস্তবতা। এবং মুহাযারা পেশ করবেন শায়খ সানাউল্লাহ আযহারী হাফিজাহুল্লাহ। তাঁর বিষয় হচ্ছে:
‘আততাশরিউল ইসলামী : মুকারানাতান লি শারায়িয়িল উখরা ‘।
দীর্ঘ ১৮ বছর লেখাপড়া করার পর গত রমজানে মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব দামাত বারাকাতুহুম পরিচালিত শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার থেকে দু’বছরের তাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা সম্পন্ন করলাম। এ পর্যায়ে এসে আরো অনেকের মতো আমারও খেদমতে আত্মনিয়োগ করার কথা ছিলো। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের নানাবিধ চ্যালেঞ্জের (জ্ঞানতাত্ত্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক এবং চিন্তাকেন্দ্রিক) মুখোমুখি দাঁড়াবার মত প্রস্তুতি কতটুকু অর্জন হয়েছে, এ প্রশ্ন আমাকে আপাতত প্রথাগত কর্মজীবনে পদার্পণ করতে অনুৎসাহিত করে এবং আরও ব্যাপক পড়াশোনা গবেষণা এবং বস্তুনিষ্ঠ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে মা’হাদ আমাদের জন্যে দরোজা খুলে দেয়।
আমার মত আরো অনেকেই একই তাড়না ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে চিন্তাকেন্দ্রের এই বাতিঘরে (লাইট হাউসে) একত্র হয়েছেন, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আলেম, দারুল উলূম দেওবন্দ এবং বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠানসমূহের কৃতি ফাজিল এবং মুতাখাসসিস।
মাহাদুল ফিকর বা চিন্তাকেন্দ্রের এই শামিয়ানায় শিক্ষকরুপে আমরা পেয়েছি দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ চিন্তাবিদ এবং কবি-সাহিত্যিকদের।যাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ তাকরির ও বক্তৃতায় আমরা ইতোমধ্যেই মুগ্ধ ঋদ্ধ ও তৃপ্ত বোধ করছি। এবং আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি যে, জীবন ও জগতের বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবার যে প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণের তৃষ্ণা ও প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি, তা পূরণ হবে এবং ভালভাবেই হবে ইনশাআল্লাহ।
কোভিড-১৯ এর কারণে যদিও সরাসরি মা’হাদে উপস্থিত থেকে পড়াশোনার সুযোগ হচ্ছে না। কিন্তু মা’হাদ কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত এবং নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। এবং নির্ধারিত বিষয়ে নির্দিষ্ট উস্তাদ মুহতারামগণ নিয়মিত দরস প্রদান করছেন আলহামদুলিল্লাহ।
সর্বোপরি চিন্তাকেন্দ্রের সুচারু পাঠ ও প্রশিক্ষণ আমাদেরকে সমৃদ্ধ করছে। ফলে উজ্জীবনের পথে আমরা পাচ্ছি স্নেহময় আলোকের সন্ধান।
যায়েফ আতিক
দিনযাপন
১৮/০৬/২০২০ইং, সোমবার