পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে যেমন রয়েছে পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা, ঠিক তেমনি রয়েছে পরস্পর পরস্পরের প্রতি জুলুম বা অন্যায় আচরণের প্রবণতা ৷ জুলুম এমন একটা অপরাধ বা অন্যায় যার অস্তিত্ব প্রতিটি সেক্টরে লক্ষ্য করা যায় ৷
সাধারণত জুলুম বলতে আমরা বুঝি কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করা, ধন-সম্পদ নষ্ট করা, হত্যা করা ইত্যাদি ৷ কিন্তু জুলুম অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে থাকে ৷ জুলুম হতে পারে স্রষ্টার প্রতি, নিজের প্রতি, অন্যের প্রতি, প্রাণীর প্রতি ও উদ্ভিদের প্রতি ইত্যাদি ৷ এছাড়াও জুলুম প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও বস্তুর প্রতিও হতে পারে ৷ তাই, জুলুম সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ৷ হাদীসে এসেছে, ‘নবী করিম (সা:) তাঁর মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন । আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা ! আমি আমার জন্য জুলুম হারাম করেছি আর তা (জুলুম) তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করেছি । অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৭৩৭)
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ পাক বিশ্বজগতের প্রতি কোনো জুলুম করতে চান না ।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১০৮) আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনার প্রভু কারো ওপর জুলুম করেন না ।’ (সূরা কাহফ, আয়াত: ৪৯)
জুলুম শব্দের সাধারণ অর্থ হলো- বস্তুকে তার সঠিক জায়গায় দাখিল না করা ৷ এছাড়াও অত্যাচার, অবিচার, জবরদস্তি, উৎপীড়ন, সীমালঙ্ঘন ইত্যাদি বুঝায় ৷ সুতরাং স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে জুলুমের অর্থ ব্যাপক ৷
যাপিত জীবনে যেভাবে আমরা স্রষ্টার প্রতি জুলুম করে থাকি সে সম্পর্কে আমরা কয়জনই বা চিন্তা করি ৷ যিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তাঁর প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি জুলুম করে থাকি ৷ অথচ এর প্রতি আমরা ভ্রূক্ষেপও করি না ৷ এটা সাধারণ কোনো অপরাধ নয়; বরং মহা অপরাধ ৷ এটা কেমন মহা অপরাধ তা বুঝতে পারা আমাদের চিন্তা-শক্তিরও বাইরে ৷
মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে রব হিসেবে গ্রহণ না করাই হলো তাঁর প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম(শিরক) ৷ কেননা তিনিই যেহেতু সবকিছুর সুৃষ্টিকর্তা; অন্য কেউই এর উপযুক্ত হকদার নয় ৷ সুতরাং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ করাই হলো আল্লাহর প্রতি জুলুম করা ৷ সকল প্রকার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র মহান আল্লাহ তা’য়ালা ৷ যখন ইবাদত অন্যের জন্য করা হয় কিংবা অন্যকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করা হয়, সেটা হবে আল্লাহর প্রতি মারাত্মক জুলুম(শিরক) ৷ লোক দেখানো ইবাদাতও এক প্রকার বড় জুলুম ৷ লোক দেখানো ইবাদত মূলত আল্লাহর সাথে ঠাট্টা কারার শামিল ৷ এমনো ঘটে যে, আমরা যখন কোনো বিপদের কবল থেকে মুক্তি পায় তখন চিন্তা না করেই বলে ফেলি, এটা না থাকলে বা এই ব্যক্তি না হলে আমি প্রায়ই মারা যেতাম বা আমার অনেক ক্ষতি হতো ৷ জমিতে সার দেওয়ার ফলে ফসল ফলেছে ইত্যাদি এসবের মধ্য দিয়ে জুলুম হয়ে থাকে ৷ এভাবে আমাদের বিভিন্ন কর্মের ক্ষেত্রে যা মাধ্যম হয়ে থাকে সেগুলোকে আল্লাহর স্থানে উত্তীর্ণ করাই হলো আল্লাহর প্রতি জুলুম করা ৷ কারণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোনো না কোনো কিছুকে আল্লাহ মাধ্যম বানিয়ে আমাদের সাহায্য করে থাকেন ৷ আবার কখনো কখনো কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ আমাদের যত্ন নেন ৷ তাই আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্ত অপরিহার্য যেন মহান রবের প্রতি জুলুম না হয়ে পড়ে ৷ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম ৷ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩) মনে রাখবেন, শিরকের গুনাহ আল্লাহ তা’য়ালা কখনো ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না তাওবা করে পুনরায় ঈমান গ্রহণ করেন ৷
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতি জুলুমের বিষয়টি সাধারণত আমরা গুরুত্বের সাথে নিই না ৷ পবিত্র কুরআনে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হেফাজত করার নির্দেশ এসেছে এবং হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে ৷ সুতরাং এর থেকে বুঝা যায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতি জুলুমের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যময় ৷ মূলত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতি জুলুমের অর্থ হলো- অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক ব্যবহার না করা ৷ যেমন- হাত দিয়ে চুরি করা, খুন করা ও অন্যায়ভাবে কাউকে প্রহার করা ইত্যাদির মাধ্যমে হাতের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ চোখ দিয়ে অশ্লীল চিত্র, মুভি, পর্ণগ্রাফি, বেগানা নারী দেখা ও পর্যাপ্ত ঘুম না দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে চোখের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ পায়ের প্রতি জুলুম হলো অন্যায় পথে তাকে ব্যবহার করা, লজ্জা স্থানের প্রতি জুলুম হলো তার হেফাজত না করা ৷ জিহ্বার প্রতি জুলুম হলো তা দিয়ে মিথ্যা বলা, গিবত করা, পরনিন্দা করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি ৷ কানের প্রতি জুলুম হলো অশ্লীল গান ও আলোচনা শ্রবণ করা ইত্যাদি ৷ মস্তিস্কের প্রতি জুলুম হলো খারাপ চিন্তা করা, খারাপ কিছুর পরিকল্পনা করা ইত্যাদি ৷ পেঠের প্রতি জুলুম হলো পর্যাপ্ত খাবারের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ অথবা অস্বাস্থ্যকর পানীয় কিংবা অসুস্থ খাবার গ্রহণ এবং হারাম উপার্জনের খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি ৷ দাঁতের প্রতি জুলুম হলো তা নিয়মিত পরিষ্কার না রাখা, ভক্ষণের ক্ষেত্রে সঠিকতা বজায় না রাখা ইত্যাদি শরীরের যাবতীয় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতি নিজেদের অবাঞ্ছিত কর্মের মাধ্যমে জুলুম হয়ে থাকে ৷ মূলত এগুলোর মাধ্যমে নিজেদের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ অতএব, আমারা যদি কখনো নিজেদের প্রতি জুলুম করি, তাহলে সাথে সাথে মহান রবের দরবারে ক্ষামা প্রার্থনা করি যেমনটা আদম ও হাওয়া (আ:) করেছিলেন- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি, আপনি যদি ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব ।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)
অন্যের প্রতিও আমরা প্রায়ই জুলুম করে বসি ৷ এটা অপরাধের দিক থেকে অনেকটাই উচ্চ স্তরের ৷ জীবন চলার পথে একে অপরের সাথে কত কিছুর আদান-প্রদান ও বাক্য বিনিময় হয়ে থাকে ৷ ফলে কখনো কখনো একে অপরের প্রতিও জুলুম হয়ে যায় ৷ অন্যের প্রতি জুলুম করা কিংবা হক্ব নষ্ট করার অপরাধ ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ক্ষমা করেন না যতক্ষণ না ঐ ব্যক্তিই ক্ষমা করে দেন ৷ সুতরাং এর প্রতি সবার কঠোর নজর রাখা অতিব জরুরী ৷ বিনা কারণে কাউকে মানসিক কিংবা শারীরিকভাবে আঘাত করা, কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া, আচরণে কষ্ট দেওয়া, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা, ঠকানো, প্রতারণা করা ইত্যাদি হচ্ছে মারাত্মক জুলুম ৷ এছাড়াও গিবত করার মাধ্যমে যার গিবত করা হয় তার প্রতি জুলুম করা হয় ৷ চাকরী করা বিভিন্ন কর্মস্থলে যথা সময়ে উপস্থিত না হওয়া এবং কর্মের ক্ষেত্রে অবহেলা কিংবা কর্মে ফাকি দেওয়াই হলো কোম্পানি বা মালিকের প্রতি জুলুম করা ৷ ক্লাসে এক মিনিট দেরিতে প্রবেশ করা এবং এক মিনিট আগে বের হওয়াও হলো ছাত্রদের প্রতি জুলুম করা; কেননা ক্লাসের নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট পর্যন্তও হচ্ছে ছাত্রদের হক্ব ৷ ওজনে কম দিয়ে এবং সঠিক মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের মাধ্যমেও ক্রেতার প্রতি জুলুম করা হয় ৷ সোশাল মিডিয়াই কারো ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাক করা, অন্যায়ভাবে রিপোর্ট মারা ইত্যাদি হচ্ছে এক প্রকার জুলুম ৷ কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানো এবং সেগুলোর সাথে সহমত প্রকাশের মাধ্যমেও ওই ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা হয় যার বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছে ৷ যোগ্য ব্যক্তির স্থলে অযোগ্য ব্যক্তিকে ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়াই হলো যোগ্য ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা ৷ শয়তানের আশ্রয় নিয়ে কারো ওপর ব্ল্যাক ম্যাজিক করা ইত্যাদি সবকিছুই জুলুম হিসেবে বিবেচিত ৷ অতএব, এই স্তরের জুলুম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত অপরিহার্য ৷ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জুলুম কিয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে ৷ (আল জামি বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ১৩৮৭)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়, তার ভাইয়ের পক্ষে তার আমলনামা থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই । কারণ সেখানে কোনো দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) পাওয়া যাবে না । তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তবে তার (মজলুম) ভাইয়ের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৫৩৪)
আমরা মানুষ হয়েও মাঝে মাঝে অমানুষের(পশু) মতো আচরণ প্রকাশ করে থাকি ৷ আমাদের বিবেকও মাঝে মাঝে বিবেকহীন হয়ে পড়ে ৷ ফলে আমাদের আবাঞ্ছিত কর্মের দরুন পশু পাখির প্রতিও জুলুম হয়ে যায় ৷ অপ্রয়োজনীয় পশুপাখি, কীটপতঙ্গ হত্যা করা, পাখির বাসা ভেঙ্গে ফেলা, অনর্থক তাদের প্রতি ইট বা পাথর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি জুলুমের অন্তর্ভুক্ত ৷ সাধারণত দেখা যায় যে, পথ দিয়ে একটি কুকুর চলে যাচ্ছে এবং কিছু বাচ্চা তার দিকে ঢিল ছুড়ছে ৷ এমনটা করা পুশুর প্রতি জুলুম ৷ দোকানের আশেপাশে থাকা পশুর ওপর গরম পানিও ছুড়তে দেখা যায় ৷ এগুলো মারাত্মক জুলুম ৷ গৃহপালিত জন্তু ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কোনো পশুপাখিকে বন্ধি করে রাখাও তাদের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ সাধারণত পশুপাখিরা জনসম্মুখেও যৌন মিলন করে থাকে ৷ কারণ তারা তো বিবেকহীন, তারা এমনটা করবে স্বাভাবিক ৷ সুতরাং এ অবস্থায় তাদের ওপর ঢিল ছুড়ে ও লাঠি দ্বারা আক্রমণ করে তাদের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ রাস্তার ধারে কোনো সাপ দেখা গেলে তাৎক্ষণাৎ তার ওপর আক্রমণ করা ইত্যাদি সবকিছু জুলুমের পর্যায়ভুক্ত ৷ এমনকি পশু কুরবানী করার সময় তাদের গলায় ধারালো তলোয়ারের পরিবর্তে অনেকটাই ভোঁতা তলোয়ার ব্যবহারের দরুন তাদের কষ্ট বৃদ্ধি পায় ৷ তাই, এরূপ করাও তাদের প্রতি জুলুম ৷ পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘পথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন ৷’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৯)
হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি পশুপাখির প্রতি রহম করে না, আল্লাহ তা’য়ালাও তার প্রতি রহম করে না ৷ অতএব, আমাদের কল্যাণার্তে যেহেতু সবকিছুর সৃষ্টি, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াও আমাদের কর্তব্য ৷
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অক্সিজেন ৷ সেই অক্সিজেন আমাদের গাছপালা যোগান দিয়ে থাকে এবং আমাদের থেকে বের হওয়া বিষাক্ত কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে থাকে ৷ ফলে আমরা সচলভাবে বেঁচে থাকতে পারি ৷ তাই, আমাদের উচিত উদ্ভিদ জগতের প্রতি যত্নশীল হওয়া ৷ নিরর্থক গাছের ডাল কাটা ও পাতা ছিড়ে ফেলার মাধ্যমে তাদের প্রতি জুলুম করা হয় ৷ এমনও হয় যে, ঘাসের ওপর বসে গল্প কিংবা আলোচনার মুহূর্তে নিরর্থক আমরা ঘাসের উপরিভাগ ছিড়তে থাকি ৷ এমনটা করাও এক ধরনের ঘাসের প্রতি জুলুম ৷ কোনো ব্যানার কিংবা সাইনবোর্ড অথবা দোয়ার কিছু লেমেন্টিং প্রচারের উদ্দেশ্যে গাছের সাথে পেরেক লাগিয়ে দেওয়া হয় ৷ মূলত এ ধরনের কাজের মাধ্যমে গাছের প্রতি জুলুম হয় ৷ কারণ গাছেরও জীবন আছে এবং তারাও ব্যাথা অনুভব করে ৷ তাই, উদ্ভিদের প্রতি সহজতা আরোপ করা এবং অনর্থক তাদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা মানুষ হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব ৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলে দেখা যায় বিশেষ করে পেইসবুক, টুইটার, ইনস্ট্যাগ্রাম, ইউটিউব, ওয়েব ইত্যাদি সাইটে আপলোড করা ভিডিও, পোস্ট করা কোনো লেখা বা ছবির উপর বিভিন্ন রিয়েক্ট ও কমেন্টের আচরণ লক্ষ্য করা যায় ৷ সে ক্ষেত্রেও কিন্তু জুলুমের বিষয় নিহীত আছে ৷ যেমন- রেয়েক্টের ক্ষেত্রে যেখানে “ক্রায়িং” রিয়েক্ট দিতে হয় সেখানে “হা হা” রিয়েক্ট দেওয়া, কমেন্টের যথার্থতা বজায় না রাখাই হলো আপলোডিং বা পোস্টিং করা বিষয়ের প্রতি জুলুম করা ৷
কিছু কিছু জুলুম রয়েছে যেগুলো কিয়ামতের আলামত হিসেবেও চিহ্নিত ৷ যেমন- যে চেয়ারে(নেতৃত্ব/ক্ষমতা) যে ব্যক্তি বসার যোগ্য না, তাকে যদি সে চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে হবে জুলুম ৷ মসজিদ পরিচালানায় ধার্মিক, বিজ্ঞ আলেমের পরিবর্তে অযোগ্য, অশিক্ষিত ব্যক্তিদের কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া হলো জুলুম ৷ যে ব্যক্তি ঈমামতি করার যোগ্যতা রাখে না, তাকে যদি ঈমামতি করতে দেওয়া হয় তাহলে সেটা হবে জুলুম ৷ সুদখোর, ঘুষখোর ইত্যাদি ব্যক্তিদের যদি সমাজের মেম্বার বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়, তাহলে হবে জুলুম ৷ এ প্রকারের কাজ সম্পাদিত হতে থাকলে বুঝতে হবে কিয়ামত সন্নিকটে এসে পড়েছে ৷ কারণ কিয়ামতের পূর্বেই জুলুম, অত্যাচার, উৎপীড়ন ইত্যাদি বেড়ে যাবে ৷
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না ।’ (সূরা আন’আম, আয়াত:৫৭)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে ।’ (সূরা আশ-শুআরা, আয়াত:২২৭)
কিছু জুলুম রয়েছে যা সবচেয়ে জঘন্য এবং কিছু জুলুম নিন্দনীয় ৷ সুতরাং সব ধরনের জুলুম থেকে বেঁচে থাকা আমাদের করণীয় ৷ যত প্রকার জুলুমের স্তর রয়েছে সবকিছু থেকে আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদের হেফাজত করেন, আমিন ৷
লেখক: আবদুর রশীদ
শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম
সদস্য- বাংলাদেশ কওমি তরুণ লেখক ফোরাম