প্রসঙ্গ : শিক্ষা ক্ষেত্রে জ্ঞানশূন্য ফটকাবাজির মাধ্যমে ফ্যান্টাসি তৈরি
বৃটিশযুগে বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি ছিলো তিনটি। বর্তমানে এই তিনের মধ্যে পরিকল্পিত-অপরিকল্পিত অসংখ্য পদ্ধতি এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ যে যার মতো পদ্ধতি চালু করছে। আশ্চর্য হওয়ার মতো বিষয়, বাংলাদেশে চৌদ্দ রকম পদ্ধতির প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে। এখানে আবার চৌদ্দজনের মধ্যে একেকজনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একেকটি। অবশ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক সবাই ফটকাবাজির মাধ্যমে ফ্যান্টাসি তৈরিতে অভিন্ন। তারা ফটকাবাজির মাধ্যমে মানুষের মনে ফ্যান্টাসি তৈরি করেন প্রধানত অর্থ, পদ আর পদবি লাভের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে। আমরা বলছি না অর্থ, পদ আর পদবি অর্জনের চেষ্টা খুব খারাপ কিছু। কিন্তু যখন তা ফটকাবাজি করে ফ্যান্টাসি তৈরির মাধ্যমে অর্জনের চেষ্টা হয় তখন আর ভালো থাকে না, হয়ে যায় ভন্ডামি। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনেল, দি ক্যাডেট, বৃটিশ-বাংলা, আন্তর্জাতিক, আধুনিক, বৃটিশ মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম ইত্যাদি শব্দ যুক্ত করে কিছু মানুষ ফ্যান্টাসি তৈরি করে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। এরপর তো আছে মিথ্যাচার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এখন প্রিন্সিপাল, কলেজের লেকচারার হয়ে যাচ্ছে অধ্যাপক বা প্রফেসর। প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফরম করা হয়েছে পুলিশ, বিডিআর, আর্মি, নৌবাহিনীর ইউনিফর্মের সাথে মিলিয়ে। অন্যদিকে জ্ঞান-বুদ্ধির অভাবে সাধারণ মানুষ বা অভিভাবকরা ফটকা নামের বাহাদুরীতে এক প্রকারের মানসিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের সন্তানদের শিক্ষার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে দৃষ্টি দিচ্ছেন নিজের প্রতিযোতি মনোভাবকে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ছোটবেলা থেকেই ফটকা, দাপ্পা ইত্যাদিতে আটকে যাচ্ছে। তারা অনেকে ব্যবধান করতে পারছে না প্রকৃত জিনিষ আর ফ্যান্টাসির মধ্যে। ফলে শিক্ষক, ছাত্র আর অভিভাবকের মধ্যে জাতীয়ভাবে মৌলিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারিত হচ্ছে না। স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মাদরাসা, সবার একই অবস্থা। ডিগ্রী বা টাইটেল হাতে আসছে কিন্তু জ্ঞান অর্জন হচ্ছে না। এই জ্ঞানশূন্য ডিগ্রী বা টাইটেল হাতে নিয়ে কর্মজীবনে পা দিয়েই প্রত্যেকের মধ্যে এক প্রকারের হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ, এই ডিগ্রী বা টাইটেল দিয়ে ঘুষ কিংবা মামা-চাচার শক্তিতে চাকুরীতে যাওয়া যায়, কিন্তু পারিবারিক কিংবা কর্মজীবন চলে না। এ রকমের ডিগ্রীধারিদের সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ববোধের অভাব দেখা দেয়। আর ব্যক্তিত্বহীনতা থেকে শুরু হয় মনের মধ্যে জীবন নিয়ে হতাশা। মানুষ মূলত এই হতাশা থেকেই পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে আটকে যায়। বর্তমান ডিগ্রী বা টাইটেলধারি শিক্ষিত সমাজের বেশিরভাগ মানুষ হতাশ হওয়ার মূল কারণ, শিক্ষা জীবনে ফ্যান্টাসি বা ফটকাবাজির আশ্রয় গ্রহণ এবং উদ্দেশ্যহীনতা। হতাশা, মেধাশূন্যতা, দায়িত্বহীনতা, অনৈতিকতা, অলসতা ইত্যাদি থেকে জাতিকে বের করে আনতে হলে সর্বপ্রথম শিক্ষাকে সর্বপ্রকার ফ্যান্টাসি এবং ফটকাবাজি থেকে বের করার উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষ কিংবা সাধারণ অভিভাবকেরা এসব ব্যাপার নিয়ে এখনও সচেতন নয়। তাদেরকে বুঝাতে হবে, শিক্ষা নিয়ে ফ্যান্টাসি তৈরির জন্য ফটকাবাজিও এক প্রকারের ভন্ডামি এবং অপরাধ। সরকারের উচিত গণমাধ্যমে এসব নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ধারাবাহিক লেখা। পর্ব-৬। চলবে…