সবার জীবনে কমবেশি দুঃখ-কষ্টের দিন থাকে।আমার জীবনের সবচে কষ্টের দিন ২১শে আগস্ট ২০১৬ইং ।
বাবা নামক মাথার ছায়া হারানোর দিন। সেদিনের সকালটা হয়েছে আমার অন্যভাবে। কে জানে সেদিনটি আমার জীবনের একটি বেদনাময় দিন হবে! সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গে।
ফ্রেশ হয়ে আম্মুকে ডাক দেই,কিন্তু কোন সাড়া পাইনি!
আব্বুকেও দেখছিনা! হঠাৎ পাশের রুম থেকে আন্টি ডাক দিয়ে বললেন তাঁদের ঘরে গিয়ে নাস্তা করবো।
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আম্মু কোথায়?
তিনি বলতে লাগলেন রাতে বাবার আবস্থার কথা।
রাতে বাবা আমার পাশেই শুয়ে ছিলেন। বাবা শাসকষ্ট,হাপানি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।এর মধ্যে কিছুদিন ধরে একটি সামান্য বিষয় নিয়ে গুরুতর চিন্তামগ্ন ছিলেন!
হঠাৎ করে তাঁর শারিরীক আসুবিধা দেখা দেয় ,যা মাঝে মধ্যে হতো।
তাই প্রাথমিক চিকিৎসা বাড়িতে চলতে থাকে, অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।তাঁর অবস্থা দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট ওসমানী মেডিকেলে দ্রুত স্থানান্তরের র্নিদেশ দেন।
দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেলে। সেখানেই চিকিৎসা চলতে থাকে ।
আমি এ খবর শুনা মাত্র ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ি!একাকী হাটতে থাকি বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এক রাস্তায়।
এমন সময় আমার ছোট চাচাতো ভাই দৌঁড়ে গিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে বড় আব্বা মারা গেছেন!
এ রকম একটি খবর শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না!শুনতেই মাথাটা ঘুরপাক খায়,লুটিয়ে পড়ে যাই রাস্তায়।
আর কিছু বলতে পারি না। কে কে নিয়ে আসলেন বাড়িতে।
হঠাৎ স্থিতি ফিরে এলে যখন সারা বাড়ির চারপাশে কান্নার শব্দ শুনতে পাই ।
খোঁজ নিলাম ছোট ভাই-বোনের,তাদেরে কী বুঝাই!
অবশেষে আমিই বাবার বড় সন্তান হিসেবে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে ছোট ভাই-বোনকে শান্তনা দিতে লাগলাম। কিন্তু, বুক বিদীর্ণ—চোখ বিশীর্ণ। হৃদয়ে শূন্যতার হাহাকার। ছোটদের শান্তনা দিতে গিয়ে নিজেকেও আর শান্ত রাখতে পারছিলাম না!
কারণ, বাবা রাতে আনন্দ-ফুর্তি করে আমার পাশেই শুয়ে ছিলেন।হার্ট এ্যাটাক নামক ভয়ানক এক দানব হুঙ্কার দিয়ে আপনাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিল! মৃত্যু শয্যায় আপনার যন্ত্রনাকীষ্ট মুখখানি দেখারও সৌভাগ্য হয়নি। আপনাকে এই জগৎ সংসারে কেউ টিকিয়ে রাখতে পারিনি। আপনি চলে গেলেন মাবুদের ডাকে সাড়া দিয়ে। কষ্ট লাগছে খুব; খুব কষ্ট! বুকের ভেতর কান্নাগুলো চেপে বেরিয়ে আসতে চাইছে। আর কিছুতেই পারছি না আব্বা—বিশ্বাস করেন আব্বা। সে দিনই হয়তো শান্তি পাবো, যে দিন আপনার পাশে শুয়ে আমি বলতে পারবো— ‘আব্বা, আপনাকে ভালোবাসি।’ হাজারো মানুষের জনসমুদ্রে ভরে ওঠে বাড়ির পরিবেশ।
আছরের নামাজের পর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদীর পাশেই শায়িত করা হয়।
অবাক হয়ে যাই বাবার জানাযায় অজস্র মানুষের সমাগম দেখে।
বাবার সাথে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ছিলো এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।।
র্দীঘদিন বাবা সৌদীআরবে অবস্থানরত ছিলেন, তাই প্রবাসীদের বেশি কাছের মানুষ ছিলেন। এলাকায় বাবার ডাক নাম দেয়া হয় বিদেশী হেলাল।
শখ ও আহ্লাদের ইতি সেদিনই টেনেছিলাম। জীবনের পথচলার সবকিছু বুঝার আগেই সেদিন হতে নিষ্ঠুরতার প্রাক্কালে এক নতুন জীবনের শুরু ।
জীবনের চরম সত্য সামনে নিয়ে পথচলা। একজনের অনুপস্থিতি জীবনের সবকিছু দেয় বদলে।
অন্ধকারে কিছু খোঁজার মতো চালিয়ে যাচ্ছি লেখাপড়া।
এই জীবনের চড়াই-উৎরাই পেরোনোর প্রতিটা দিনের গল্প যতটানা র্নিমম তার চেয়ে বেশি নিষ্টুরতা।
দুঃখ –কষ্ট সহ্যের অসীম এক ক্ষমতা দিয়েছেন আল্লাহ। অসমাপ্ত জীবনের নিষ্ঠুর শৈশব শিখিয়েছে অনেক কিছু।
লেখক: শিক্ষার্থী, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ।