সারা বিশ্বের চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ ফলাফলের অপেক্ষায় । ডোনাল্ড ট্রাম্প না জ্যো বাইডেন-আগামী চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকবেন কে, চূড়ান্ত ফলাফলের প্রতীক্ষায় সবাই। যদিও জ্যো বাইডেনের বিজয় অনেকটা নিশ্চিতই বলা যায়। তারপরও আনুষ্ঠানিক বিজয় শুনার অপেক্ষায় সবাই।
কিন্তু সবার প্রতিক্ষা আর আমাদের প্রতিক্ষা কখনো সমান না। আর সমানভাবে দেখার কোনো মানেও নেই। কারণ, আগামীর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেন আমাদের, আইমিন; মুসলমানদের জন্য কতটুকু নিরাপদ? সে প্রশ্নই আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে জটিল। আগামীর আমেরিকার রূপ কী হতে চলেছে—কিছুই বলা যাচ্ছে না। আর কোনো জরিপ দিয়ে সেটাকে শুদ্ধ করে বলার সুযোগও নেই। জ্যো বাইডেনের আমেরিকা বিশ্বের অন্যান্য সব মুসলমানদের সাথে কী আচরণ করবে; সেটাই আমাদের কাছে মুখ্য; যেটা আল্লাহ মা’লুম।
কয়েকজন প্রবাসী আমিরকানদের সাথে এ নিয়ে কথা হলো। অনেক আমেরিকা প্রবাসী বলছেন—ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেন নাকি অনেকটা নিরাপদ। বাইডেন ক্ষমতায় এলে অভিবাসন সমস্যার কোনো অবনতি হবে না। আমেরিকার গণতান্ত্রিক ভিত আরো মজুবত হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন—জ্যো বাইডেন ক্ষমতায় এলে আমরা নির্ভেজালভাবে আমেরিকায় বাস করতে পারব। যেখানে প্রত্যেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমান চোখে দেখা হবে।’ আবার কারো মন্তব্য—বাইডেনকেই ভালো লোক। ট্রাম্পের স্বার্থান্বেষী বকবকের চেয়ে বাইডেনের কথাবার্তাই ভালো।
এসব অনুভূতিকে আমি বিচ্ছিন্নভাবেই নিচ্ছি। এগুলোর কেনো গুরুত্ব নেই। কারো কথাই আমাকে তৃপ্তি করতে পারেনি। এমনকি বিশ্বাসেও কোনো দাগ ফেলতে পারেনি।
কারণ, অতীতের সমিকরণে একটা জিনিস ক্লিয়ার করি; মুসলিম প্রশ্নে আসলে কেউই নিরাপদ না। আমেরিকা বলেন আর ম্যারিকা। আপনারা দেখবেন- সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা যখন তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন, তখন তার শুরুটা ছিল আরও নাটকীয় ; তিনি প্রচারণা শুরু করেছিলেন মুসলমানদেরকে সালাম প্রদানের মাধ্যমে। ঠিক তখনো আমরা এসব অলিক স্বপ্নে গা ভাসিয়ে অনেকেই শান্তির মানযিল দেখছিলাম; কিন্তু সেই প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার বুলেটেই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল পুরো সোমালিয়া আর সিরিয়া। আর এই বাইডেন-ই না কি ছিলেন তখনকার আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। এটাই বাইডেনের অতীত ইতিহাস।
আরেকটা বিষয় ক্লিয়ার করি- আজ দেখলাম একাট ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যাচ্ছে—”হযরত মুহাম্মদের (সা.) একটি হাদিসে নির্দেশ করা হয়েছে—তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। তা সম্ভব না হলে যেন মুখে প্রতিবাদ করে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে যেন মন থেকে ঘৃণা করে। এরপর বাইডেন বলেন—আপনারা অনেকেই এই দীক্ষা নিয়ে জীবনধারণ করেন, এই বিশ্বাস আর নীতি নিয়ে—যা যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন একটি প্রশাসন এবং এমন একজন প্রেসিডেন্ট আপনাদের প্রাপ্য—যারা এসব উদ্যোগে আপনাদের সাথে কাজ করবে এবং আপনাদের সমর্থন করবে। আমার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার সৌভাগ্য হলে সবাই একসাথে মিলে ভুলকে ঠিক করতে, পৃথিবীকে আরো সুন্দর করতে; আমাদের হাত, আমাদের হৃদয় এবং আমাদের আশা দিয়ে কাজ করবো।” সবার শেষে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
আমি জানিনা, জ্যো বাইডেন এইসব ভুলি আওড়ানোর মাধ্যমেই কী অনেককিছুর আগাম বার্তা দিয়ে দিলেন কি না। কারণ, তাদের চোখে তো কেবল মুসলমানরাই অপরাধী। অন্যায় বলতেই মুসলমানরা করে। সন্ত্রাস বলে কিছু একটা থাকলে; সেটাও মুসলমানরা। তারা মুসলমানদের সিম্প্যাতি কামানোর জন্য এসব কথা তো অহর্নিশ বলে বেড়ান। এরকম অনেক হাদিস তাদের মখস্ত। যেগুলোকে কেবল তারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ব্যবহার করেন। আর আমরা তাদের এসব কথার প্যাচে পড়ে সবসময় পিচঢালা-ই হই।
আমি মনে করি— এবং আমেরিকাকে এই নীতিতেই পরিমাপ করি যে—তারা জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আগাম কোনো ভবিষ্যৎবানী না দিয়ে অপেক্ষা করুন; আমরা বাইডেনের আগামী দেখতে থাকি।
লেখক: আলেম,মুফতী, লেখক, সম্পাদক